পবিত্র মাহে রমজান
রোজার নিয়্যাত
রোজার নিয়্যাত
نَوَيْتُ
اَنْ اُصُوْمَ
غَدًا
مِّنْ
شَهْرِ
رَمْضَانَ
الْمُبَارَكِ
فَرْضَا
لَكَ يَا
اللهُ
فَتَقَبَّل
مِنِّى
اِنَّكَ
اَنْتَ
السَّمِيْعُ
الْعَلِيْم
আরবি নিয়ত : নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি
ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
বাংলায় নিয়ত : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে
নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে
(আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতার করার দোয়া
اللهم
لك صمت
و على
رزقك افطرت .
বাংলায়
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সুমতু লাকা, ওয়া তাওআক্কালতু আ‘লা রিঝক্বিকা, ওয়া আফতারতু
বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমীন
বাংলায়
অর্থ: হে আল্লাহ পাক! আমি আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া
রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি।
রোজার সুন্নাত সমূহ
এক:
রোজাদারকে
কেউ গালি দিলে অথবা তার সাথে ঝগড়া করলে এর বিনিময়ে তার সাথে ভাল ব্যবহার করে বলবে: “আমি রোজাদার”।
দুই:
রোজাদারের
জন্য সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সেহেরীর মধ্যে বরকত রয়েছে।
তিন:
অনতিবিলম্বে
ইফতার করা সুন্নত; আর দেরিতে সেহরী খাওয়া সুন্নত।
চার:
কাঁচা
খেজুর দিয়ে ইফতার করা; কাঁচা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দিয়ে; শুকনো খেজুরও না
পেলে পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।
পাঁচ:
ইফতারের
সময় এই দোয়াটি পড়া
"ذَهَبَ
الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ
الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ
الْأَجْرُ إِنْ
شَاءَ اللَّهُ"
“তৃষ্ণা দূর হয়েছে; শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং প্রতিদান সাব্যস্ত হয়েছে; ইনশাআল্লাহ”।
ছয়:
রোজাদারের
বেশি বেশি দু’আ করা মুস্তাহাব। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
বাণী: “তিন ব্যক্তির দু’আ
ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক। রোজাদার; ইফতার করার পূর্ব পর্যন্ত। মজলুমের দু’আ।
মুসনাদে
আহমাদ (৮০৪৩), মুসনাদ কিতাবের পাঠোদ্ধারকারী সম্পাদকগণ হাদিসটিকে অন্যান্য সহায়ক সনদ ও
হাদিসের ভিত্তিতে ‘সহিহ’ বলেছেন।
ইমাম নববী
(রহঃ) বলেছেন:
রোজাদারের
জন্য রোজাপালনকালে নিজের জন্য, প্রিয় মানুষের জন্য এবং সকল মুসলমানের দুনিয়া ও আখেরাতের
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দু’আ করা মুস্তাহাব।[আল-মাজমু (৬/৩৭৫)]
সাত:
রোজার দিন
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করা মুস্তাহাব:
- মসজিদে বসে বসে কুরআন তেলাওয়াত করা ও আল্লাহর যিকির করা।
- শেষ দশদিন ইতিকাফ করা।
- তারাবীর নামায আদায় করা।
- বেশি বেশি দান সদকা করা।
- পরস্পর কুরআন অধ্যয়ন করা
রোজার মাকরুহ
১.
অনাবশ্যক কোনো জিনিস চিবানো।
২. কোনো
দ্রব্য মুখে দিয়ে রাখা।
৩. গড়গড়া
করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া কিন্তু পানি যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে
যাবে।
৪.
ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে গলাধঃকরণ করা।
৫. গিবত, গালাগালি ও
ঝগড়া-ফ্যাসাদ করা। কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করতে এলে বলতে হবে, আমি রোজাদার
তোমাকে প্রত্যুত্তর দিতে অক্ষম।
৬. সারাদিন
নাপাক অবস্থায় থাকা। এটি অত্যন্ত গুনাহের কাজ।
৭.
অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা।
৮. কয়লা
চিবিয়ে অথবা পাউডার, পেস্ট ও মাজন ইত্যাদি দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা।
৯. গুল
লাগানো। যদি গুল থুথুর সঙ্গে গলার ভেতর চলে যায় তবে রোজা ভেঙে যাবে।
১০. গিবত
বা পরনিন্দা করা।
১১. মিথ্যা
কথা বলা।
১২.
ঝগড়া-বিবাদ করা।
১৩. যৌন
উদ্দীপক গান শুনা।
১৪. নাচ, গান, সিনেমা দেখা।
১৫. রোজা
অবস্থায় কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করলে (যেমন, জিহ্বার উপর দিয়ে লবণ, মরিচ ইত্যাদি পরীক্ষা করলে)। অবশ্য বিশেষ
প্রয়োজনে তা বৈধ।
১৬. হারাম
দ্রব্য দিয়ে ইফতার করলে।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমুহ:
১.ইচ্ছাকৃত
পানাহার করলে।
২. স্ত্রী সহবাস করলে ।
৩. কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙ্গবে না)।
৪. ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে।
৫. নস্য গ্রহণ করা, নাকে বা কানে ওষধ বা তৈল প্রবেশ করালে।
৬. জবরদস্তি করে কেহ রোজা ভাঙ্গালে ।
৭. ইনজেকশান বা স্যালাইরনর মাধ্যমে দেমাগে ওষধ পৌছালে।
২. স্ত্রী সহবাস করলে ।
৩. কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙ্গবে না)।
৪. ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে।
৫. নস্য গ্রহণ করা, নাকে বা কানে ওষধ বা তৈল প্রবেশ করালে।
৬. জবরদস্তি করে কেহ রোজা ভাঙ্গালে ।
৭. ইনজেকশান বা স্যালাইরনর মাধ্যমে দেমাগে ওষধ পৌছালে।
৮. কংকর
পাথর বা ফলের বিচি গিলে ফেললে।
৯. সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সুর্যাস্ত হয়নি।
১০. পুরা রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে।
১১. দাঁত হতে ছোলা পরিমান খাদ্য-দ্রব্য গিলে ফেললে।
৯. সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সুর্যাস্ত হয়নি।
১০. পুরা রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে।
১১. দাঁত হতে ছোলা পরিমান খাদ্য-দ্রব্য গিলে ফেললে।
১২. ধূমপান
করা, ইচ্ছাকৃত লোবান বা
আগরবাতি জ্বালায়ে ধোয়া গ্রহন করলে।
১৩. মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে ।
১৪. রাত্রি আছে মনে করে সোবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।
১৫. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর নিদ্রা হতে জাগরিত হওয়া এ অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।
১৩. মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে ।
১৪. রাত্রি আছে মনে করে সোবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।
১৫. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর নিদ্রা হতে জাগরিত হওয়া এ অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।
আর যদি
রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রী সহবাস অথবা পানাহার করে তবে কাজা ও
কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। কাফফারার মাসআলা অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের থেকে জেনে নেবে।
কোরআন
১) হে
মুমিনগণ! তোমাদের জন্যে সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে
দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সূরা বাকারা-২:১৮৩)
২) সিয়াম
নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই
সংখ্যা পূর্ণ করবে। এটা যাদের সাতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে
ফিদইয়া-একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান করা। যদি কেউ স্বা:স্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে
তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর
যদি তোমরা জানতে। (সূরা বাকারা-২:১৮৪)
৩) রমাজান
মাস, এতে মানুষের
দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবর্তীর্ণ
হয়েছে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে এবং
কেউ অসুস্থ্য থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের
জন্যে যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্যে কষ্টকর তা চান না, এজন্যে যে তোমাদের
সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহিমা
ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে। (সূরা বাকারাহ ২:১৮৫)
৪) সিয়ামের
রাতে তোমাদের জন্যে তোমাদের স্ত্রীদের বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্যে এবং
তোমরাও তাদের জন্যে পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথে খিয়ানত
করছিলে, অতঃপর তিনি
তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন, সুতরাং এখন তোমরা
তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন (অর্থাৎ
সন্তান) তা অন্বেষণ করো। আর তোমরা আহার করো ও পান করো যতক্ষণ তোমাদের জন্যে
(রাত্রির) কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর রাত পর্যন্ত
সিয়াম পূর্ণ করো। আর তোমরা মসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সংগত হয়ো না। এগুলো
আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা, সুতরাং এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্যে
তার আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে। (সূরা বাকারা ২:১৮৭)
হাদিস
১) হযরত
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সো:)ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবসহ রমজান
মাসের সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে।(সহীহ
বুখারী: ৩৮, সহীহ মুসলিম:৭৬০)
২) হযরত
সাহল বিন সা’দ (রা.) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সো:)ইরশাদ করেন, জান্নাতের একটি দরজা আছে, একে রাইয়ান বলা হয়, এই দরজা দিয়ে
কিয়ামতের দিন একমাত্র সায়িম ব্যক্তিই জান্নাত প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই
পথে প্রবেশ করবে না। সেদিন এই বলে আহবান করা হবে সায়িমগণ কোথায়? তারা যেন এই পথে
প্রবেশ করে। এভাবে সকল সায়িম ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অত:পর এ পথে আর কেউ প্রবেশ করেবে না।
(সহীহ বুখারী:১৮৯৬, সহীহ মুসলিম: ১১৫২)
৩) হযরত
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সো:)ইরশাদ করেন, সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ
কোনোদিন সিয়াম পালন করলে তার মুখ থেকে যেন অশ্লীল কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে
গালমন্দ করে অথবা ঝগড়ায় প্ররোচিত করতে চায় সে যেন বলে, আমি সায়িম।
(সহীহ বুখারী: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম:১১৫১)
৪) হযরত
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সো:)ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সিয়াম ব্যতীত আদম
সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম
ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং
ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি সায়িম
(রোজাদার)। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, তার শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের
গন্ধের চেয়েও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দু’টি খুশি, যা তাকে খুশি করে।
যখন যে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের
বিনিময়ে আনন্দিত হবে।
(সহীহ বুখারী: ১৯০৪, সহীহ মুসলিম:১১৫১)
৫) হযরত
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সো:)ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত।
এটা এক অত্যন্ত বারাকতময় মাস। আল্লাহ তা’য়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ
করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ
করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শাইতানগুলোকে আটক রাখা হয়।আল্লাহর জন্যে এ মাসে
একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণলাভ হতে বঞ্চিত
থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত
ব্যক্তি।
(সুনানুন নাসায়ী:২১০৬)
No comments:
Post a Comment